সিলেট নগরের করিম উল্লাহ মার্কেটে দোকানকোঠা কিনে মালিকপক্ষের প্রতারণার শিকার হয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী। প্রায় চার বছর ধরে তার দোকান দখল করেছেন কর্তৃপক্ষ। এমনকি প্রাণে মারার হুমকিও দেওয়া হয়েছে তাকে। সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেছেন, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের গোপশহর গ্রামের মরহুম মো. তহুর আলীর ছেলে মো. আমিরুল ইসলাম নজমুল। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমি একজন বৃটিশ নাগরিক ও রেমিট্যান্স যোদ্ধা। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছি যুক্তরাজ্যে। নাড়ির টানে অন্যান্য প্রবাসীদের মতো আমিও দেশে বিনিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু সেই বিনিয়োকৃত সম্পদ আত্নসাতের ঘটনায় আমি আজ দিশেহারা।’ আমিরুল ইসলাম নজমুল জানান, ২০০১ সালে বন্দরবাজারে নগরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের খরাদিপাড়ার আনন্দ ৩৮ নম্বর বাসার বাসিন্দা মো. আমান উল্লাহর ছেলে ছানা উল্ল্যাহ ফাহিম, তার তাই মো কুদরত উল্লাহ ফাহের, তাদের চাচাতো ভাই মো. শাহজাহান উল্লাহর ছেলে আতাউল্লাহ সাকেরের মালিকানাধীন জায়গায় করিমউল্লাহ মার্কেট গড়ে ওঠে। দ্বিতীয় তলায় ১০৪.৫২ স্কয়ার ফিটের ৩৪ নম্বর দোকান ক্রয়ের জন্য মালিকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন তিনি। তিনি বলেন, ‘দোকান স্থায়ী বন্দোবস্ত পাওয়ার পর আমি তাদেরই মনোনীত একজনকে ভাড়া দেই এবং মালিকপক্ষকে নিয়মিতই জমিদারি ভাড়া দিয়ে আসছিলাম। একপর্যায়ে আমার দোকানকোঠায় লোলুপ দৃষ্টি পড়ে মার্কেট মালিকের। আমি প্রবাসী এই অজুহাত দেখিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ তারা আমার কাছে জমিদারি ছাড়াও মাসিক আরও বাড়তি ৩ হাজার টাকা দাবি করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দোকানের পূর্ববর্তী ভাড়াটিয়াকে বের করে ১ অক্টোবর থেকে দিলদার নামের এক ব্যক্তিকে নতুন করে ভাড়া দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন মালিকপক্ষ। নতুন ভাড়াটিয়াকে দোকান বুঝিয়ে দেওয়ায় ৫ দিনের মাথায় অর্থাৎ ৫ অক্টোবর আমার দেওয়া ভাড়াটিয়াকে বের করে দিয়ে ছানা উল্লাহ ফাহিম আমার দোকানে তালা দেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় পরিকল্পিতভাবে কর্তৃপক্ষ দোকান দখল করে নেয় অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘খবর পেয়ে পরদিন ৬ অক্টোবর মার্কেটের অফিসে গিয়ে ছানাউল্লাহ ফাহিমের সাথে দেখা করে দোকানে তালা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি আমাকে ডিফোল্ডার উল্লেখ করে নিয়মিত জামিদারি ভাড়া পরিশোধ না করার অভিযোগ তুলেন।’ নিয়মিত জমিদারি ভাড়া প্রদানের রশিদ প্রদর্শন করায় ছানাউল্লাহ ফাহিম ক্ষিপ্ত হয়ে নানা ভয়ভীতি দেখান বলে অভিযোগ করেন আমিরুল ইসলাম নজমুল। তিনি বলেন, ‘মূল বিষয় ছিল- তাদের দাবিকৃত মাসিক বাড়তি ৩ হাজার টাকা ও তাদের মনোনীত ভাড়াটিয়াকে দোকান না দেওয়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন নিয়মিত জমিদারির ভাড়া পরিশোধের রশিদ প্রদর্শন করি এবং আমার কাছে কোনো ভাড়া বকেয়া নেই সেটি প্রমাণ করি তখন তিনি উত্তেজিত হয়ে দোকান ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন এবং উপস্থিত ক্যাডাররা আমাকে প্রাণে মারার হুমকি দেন। আমি প্রাণভয়ে বিষয়টি অমিমাংসিত রেখে ফিরে যাই লন্ডনে।’ পরবর্তীতে তাদের মনোনীত ভাড়াটিয়া ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান কবিরকে দিয়ে দোকানটি দখল করিয়ে নেন বলে অভিযোগ এই প্রবাসীর। প্রবাসে গিয়ে যোগাযোগ করলে নানা ভয়ভীতি দেখান সাকের এবং দোকানটি তার নামে লিখে দেওয়ার জন্য বলেন। যুক্তরাজ্য প্রবাসী নজমুল বলেন, ‘২০২১ সালের ২১ মে দেশে ফিরে ছানাউল্লাহ ফাহিমের সঙ্গে প্রথমে বৈঠকে বসি। সমাধান না হওয়ায় পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে আতাউল্লাহ সাকের সঙ্গে বসি। সে সময় সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আজাদুর রহমান আজাদ উপস্থিত ছিলেন।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, কাউন্সির আজাদ তিন দিনের মধ্যে বিষয়টির সমাধানের আশ^াস দিলেও আজ চার বছর অতিবাহিত হয়েও বিষয়টি সুরাহা হয়নি। বরং, কাউন্সিলর আজাদের সঙ্গে শেষ বৈঠকে তিনি আমাকে নামমাত্র মূল্যে দোকানের মায়া ত্যাগ করার পরামর্শ দেন। প্রবাসী নজমুলের দাবি, ছানাউল্লাহ ফাহিম ও আতাউল্লাহ সাকেরের প্রতারণার কারণে তিনি বিগত সময়ে লন্ডনে সব ফেলে বার বার দেশে এসেছেন। বিমান টিকিট, যাতায়াত, বিবিধ খরচ ও করোনার সময় কোয়ারেন্টিন থাকা বাবদ খরচ হয়েছে অন্তত ৩০ লাখ টাকা। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত আমি আমার দোকানের কোনো ভাড়া পাচ্ছি না। এ পর্যন্ত ভাড়া বাবদ অন্তত ১২ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। সবমিলিয়ে ৪২-৪৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। নিজের মালিকানাধীন দোকানের দখল ও ক্ষতিপূরণ পেতে তিনি প্রশাসন ও বর্তমান সরকারের উধ্বর্তন কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি