প্রকাশনার ১০ বছর

৩রা অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১১ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

চিকিৎসকদের হাতের লেখা ঠিক করতে বলল ভারতের আদালত

দৈনিক জনপদ
প্রকাশিত ০১ অক্টোবর, বুধবার, ২০২৫ ১৯:২৮:৫৭
চিকিৎসকদের হাতের লেখা ঠিক করতে বলল ভারতের আদালত

লেখার জন্য যখন বেশিরভাগ মানুষই এখন কিবোর্ড ব্যবহার করছে, তখন হাতের লেখার গুরুত্ব কতইবা?

না, এখনও গুরুত্বপূর্ণ, যদি সেই লেখা হয় কোনো চিকিৎসকের, বলছে ভারতের আদালত।

চিকিৎসকদের হাতের লেখা এতই হিজিবজি যে তার মর্মোদ্ধার করার ক্ষমতা কেবল দোকানের ফার্মাসিস্টদেরই থাকে, বিশ্বজুড়ে থাকা এ কৌতুক ভারতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

কিন্তু পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্টের সাম্প্রতিক আদেশ বলছে, ‘পাঠযোগ্য মেডিকেল প্রেসক্রিপশন একটি মৌলিক অধিকার’ কারণ এটি জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করতে পারে।

এমন এক মামলায় এই রায় এসেছে যার সঙ্গে হাতের লেখার কোনো সম্পর্কই নেই, বলছে বিবিসি।

ধর্ষণ, প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে এক নারীর করা মামলায় এক পুরুষের জামিন আবেদন শুনছিলেন বিচারপতি জাসগুরপ্রীত সিং পুরি।

ওই নারীর অভিযোগ ছিল, পুরুষটি সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার কাছ থেকে অর্থ নিয়েছে, ভুয়া সাক্ষাৎকার নিয়েছে এবং তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হয়েছে।

যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার দাবি- তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে, কিন্তু টাকাপয়সা নিয়ে ঝামেলা বাধার পর ওই নারী মামলা করেছেন।

মামলাকারীর শারীরিক পরীক্ষা করেন সরকারি এক চিকিৎসক, তার সেই চিকিৎসা সংক্রান্ত আইনি প্রতিবেদনের দিকে তাকিয়ে বিচারপতি পুরি বুঝতে পারেন, এটি পড়ার ক্ষমতা তার নেই।

“এটি এই আদালতের টনক নড়িয়ে দিয়েছে, কারণ একটি শব্দ বা অক্ষরও পাঠযোগ্য নয়,” আদেশে এমনটাই লিখেছেন বিচারপতি।

রায়ের কপিটি দেখেছে বিবিসি, এর সঙ্গে চিকিৎসকের দেওয়া প্রতিবেদন ও দুই পৃষ্ঠার প্রেসক্রিপশনও ছিল, যাতে চিকিৎসকের হাতের লেখা বোঝার কোনো উপায়ই নেই।

“প্রযুক্তি আর কম্পিউটার সহজলভ্য থাকার পরও সরকারি চিকিৎসকরা এখনও হাতে প্রেসক্রিপশন লিখছেন, যা হয়তো কিছু কেমিস্ট বাদে কেউ পড়তে পারে না, এটা সত্যিই আশ্চর্যজনক,” লিখেছেন বিচারপতি পুরি।

আদালত সরকারকে মেডিকেলের পাঠ্যক্রমে হাতের লেখা সংক্রান্ত পাঠ যুক্ত করতে বলেছে; পাশাপাশি ডিজিটাল প্রেসক্রিপশনের জন্য দুই বছরের সময়ও বেঁধে দিয়েছে।

ততদিন সব চিকিৎসককে প্রেসক্রিপশন বড় অক্ষরে স্পষ্টভাবে লিখতে হবে, আদেশে বলেছেন বিচারপতি পুরি।

প্রায় সাড়ে তিন লাখ সদস্যের ভারতীয় মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ড. দিলীপ ভানুশালি বলেছেন, তারা এ সমস্যার একটি সমাধান বের করতে আগ্রহী।

বড় বড় শহর ও মেগাসিটিগুলোতে চিকিৎসকরা ডিজিটাল প্রেসক্রিপশনে চলে গেলেও ছোট শহর ও গ্রামে স্পষ্ট হাতের লেখার প্রেসক্রিপশন পাওয়া মুশকিল, বলছেন তিনি।

“অনেক চিকিৎসকের হাতের লেখা যে খারাপ তা সবাই জানে। কিন্তু এর কারণ হচ্ছে চিকিৎসকরা খুবই ব্যস্ত থাকেন, বিশেষ করে ভিড়ঠাসা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

“সরকারি নির্দেশ মেনে চলতে এবং রোগী ও কেমিস্ট উভয়েই পড়তে পারে এমন বড় অক্ষরে প্রেসক্রিপশন লেখার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি আমরা। দিনে সাতটি রোগী দেখেন এমন চিকিৎসক এই পরামর্শ মানতেই পারেন, কিন্তু যদি আপনি দিনে ৭০ জনকে দেখেন, তখন আপনি পারবেন না,” বলেছেন ভানুশালি।

চিকিৎসকদের হাতের লেখার নিয়ে এর আগেও ভারতের বিভিন্ন আদালত উদ্বেগ জানিয়েছিল। ওড়িশার হাইকোর্ট একবার বলেছিল ‘চিকিৎসকদের আঁকাবাঁকা হাতের লেখা’ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিল, এলাহাবাদ হাইকোর্ট ‘পড়া যায় না এমন অস্পষ্ট লেখা প্রতিবেদনের’ সমালোচনা করেছিল।